ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অন্ধকার দূর করার প্রত্যয়

ঢাকা : অন্ধকার কাটিয়ে আলোর দিকে ধাবিত হওয়ার প্রত্যয়ে হলো ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান ছিল ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী।’

রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরে টিএসসি মোড় হয়ে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে পৌনে ১০টার দিকে শেষ হয় শোভাযাত্রা।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, তরুণ প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রতিবারই আমাদের সামনে নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে উপস্থিত হতে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী, আমরা অন্ধকারকে কাটিয়ে আলোর পথে যাব। এটাই হলো আমাদের প্রতিশ্রুতি। এটাই আমাদের প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্মের কাছে। এই তরুণ প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

ঢাক-ঢোল বাদ্যের তালে তালে রাজা-রানি, হাতি, পাখি, বড় মুখোশ, গাজীর পটে আঁকা দুটি চিত্র, বনরুই, চাকা, গন্ধগোকুল ও টেপা পুতুল ইত্যাদি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

‘আমরা তো তিমির বিনাশী’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় হয়ে শিশু পার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে আবার শাহবাগ হয়ে ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) হয়ে চারুকলায় ফিরে মঙ্গল শোভাযাত্রার সমাপনী ঘোষণা করেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বড় আকারের প্রতীকগুলো লোকসংস্কৃতির উপকরণ ও দেশের বিপন্ন প্রাণী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বড় আকারের রাজা-রানির দুটি মুখোশ। ছোট আকারে হাতে বহন করার মতো ফুল, প্যাঁচা, পাখির মুখোশ। চারুকলা অনুষদের রাস্তার দেওয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে আল্পনা। গ্রামবাংলার নারী, পশু-পাখির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি সাড়া পৃথিবীর সম্পদ। বাঙালির যে অপরিমেয় ঐতিহ্য আছে, সেটি ইউনেস্কো আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। তিনি বাঙালি সংস্কৃতিকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। নববর্ষ ভাতা চালু করা হয়েছে। যাতে আমরা নববর্ষ উদযাপন করতে পারি।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রথম এবং শেষে ছিল র‍্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে দর্শকরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। দর্শক সারিতে অনেক বিদেশি নাগরিকও অংশ নিয়েছেন। জাপান, চীন, পোল্যান্ড ইত্যাদি দেশের কয়েকজন নারী-পুরুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

পোল্যান্ডের নাগরিক পিটার এসেছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। তিনি কালবেলাকে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা মানুষের মুখে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের বর্ষবরণের এক আশ্চর্যজনক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম আমি।

রাজধানীর গুলশান থেকে ডা. তাছলিমা ইসলাম মেয়ে নুরেন ফাইজাকে নিয়ে এসেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। তিনি বলেন, প্রতিবছর মেয়েকে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে আসি। আমি সবসময় চেয়েছি, আমার সন্তান নিজের সংস্কৃতি, রাষ্ট্রভাষাকে শিখবে। ওর বয়স যখন দুই বছর তখন থেকে ওকে বর্ষবরণ দেখতে নিয়ে আসি। এখন ও স্নাতক করেছে। এই দিনটি আমার সন্তানকে নিয়ে পালন করি।

ট্যাগস :

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অন্ধকার দূর করার প্রত্যয়

আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা : অন্ধকার কাটিয়ে আলোর দিকে ধাবিত হওয়ার প্রত্যয়ে হলো ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান ছিল ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী।’

রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরে টিএসসি মোড় হয়ে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে পৌনে ১০টার দিকে শেষ হয় শোভাযাত্রা।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, তরুণ প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রতিবারই আমাদের সামনে নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে উপস্থিত হতে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী, আমরা অন্ধকারকে কাটিয়ে আলোর পথে যাব। এটাই হলো আমাদের প্রতিশ্রুতি। এটাই আমাদের প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্মের কাছে। এই তরুণ প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

ঢাক-ঢোল বাদ্যের তালে তালে রাজা-রানি, হাতি, পাখি, বড় মুখোশ, গাজীর পটে আঁকা দুটি চিত্র, বনরুই, চাকা, গন্ধগোকুল ও টেপা পুতুল ইত্যাদি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

‘আমরা তো তিমির বিনাশী’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় হয়ে শিশু পার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে আবার শাহবাগ হয়ে ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) হয়ে চারুকলায় ফিরে মঙ্গল শোভাযাত্রার সমাপনী ঘোষণা করেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বড় আকারের প্রতীকগুলো লোকসংস্কৃতির উপকরণ ও দেশের বিপন্ন প্রাণী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বড় আকারের রাজা-রানির দুটি মুখোশ। ছোট আকারে হাতে বহন করার মতো ফুল, প্যাঁচা, পাখির মুখোশ। চারুকলা অনুষদের রাস্তার দেওয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে আল্পনা। গ্রামবাংলার নারী, পশু-পাখির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি সাড়া পৃথিবীর সম্পদ। বাঙালির যে অপরিমেয় ঐতিহ্য আছে, সেটি ইউনেস্কো আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। তিনি বাঙালি সংস্কৃতিকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। নববর্ষ ভাতা চালু করা হয়েছে। যাতে আমরা নববর্ষ উদযাপন করতে পারি।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রথম এবং শেষে ছিল র‍্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে দর্শকরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। দর্শক সারিতে অনেক বিদেশি নাগরিকও অংশ নিয়েছেন। জাপান, চীন, পোল্যান্ড ইত্যাদি দেশের কয়েকজন নারী-পুরুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

পোল্যান্ডের নাগরিক পিটার এসেছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। তিনি কালবেলাকে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা মানুষের মুখে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের বর্ষবরণের এক আশ্চর্যজনক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম আমি।

রাজধানীর গুলশান থেকে ডা. তাছলিমা ইসলাম মেয়ে নুরেন ফাইজাকে নিয়ে এসেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। তিনি বলেন, প্রতিবছর মেয়েকে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে আসি। আমি সবসময় চেয়েছি, আমার সন্তান নিজের সংস্কৃতি, রাষ্ট্রভাষাকে শিখবে। ওর বয়স যখন দুই বছর তখন থেকে ওকে বর্ষবরণ দেখতে নিয়ে আসি। এখন ও স্নাতক করেছে। এই দিনটি আমার সন্তানকে নিয়ে পালন করি।