ঢাকা ১০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধ হয়নি ‘সাজগোজের’ প্রতারণা

ঢাকা : ঈদ উপলক্ষ্যে কসমেটিক্স বিক্রেতাদের বিক্রির ধুম পড়েছে। এই সুযোগে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানও আইন লঙ্ঘন করে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। ‘সাজগোজ’ এর মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করতে পিছপা হচ্ছে না। এমন ঘটনার জন্য ইতোপূর্বে তাদের জরিমানাও করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

তবে এই শাস্তির পরও থামেনি তাদের প্রতারণা। বিদেশ থেকে পণ্য আনা হলে সেই পণ্যে আমাদানিকারকের তথ্য থাকে। কিন্তু সাজগোজের শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বহু পণ্যে এমন কোনো তথ্য নেই।

ঈদের আগে চকবাজার থেকে নকল পণ্য এনে কোরিয়া-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নামে বিক্রি করছে কিনা তা নিয়ে ক্রেতারা বিভ্রান্তিতে পড়েছে। ফলে অনেকে সাজগোজের পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন।

আলিফা জাহান ইশা নামে একজন ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘অথচ সাজগোজরে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম।’ হালিমা নামে একজন লিখেছেন ‘হোয়াট দ্য, এই সাজগোজ থেকে প্রতিমাসেই আমি ২ বার বা ৩ বার অর্ডার করে থাকি। এত বড় পেইজে যদি এই অবস্থা হয় কই যাব তাহলে।’

এছাড়াও সাজগোজের পণ্যে যেসব বারকোড থাকে তা স্ক্যান করেও কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ফলে এসব পণ্য নকল বলেই সন্দেহ ক্রেতাদের।

হামিদা আক্তার সুমি নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ১ মাসেরও ওপর হয়ে যাচ্ছে সাজগোজ থেকে কিছু প্রোডাক্ট কিনেছিলাম। অন্ধ বিশ্বাস করে সেগুলো ব্যবহার করে আসছি। তাই ক্রয় রশিদও ফেলে দিয়েছি। সম্প্রতি সাজগোজে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান দেখে সন্দেহবশত প্রোডাক্টগুলো বের করে অ্যাপস দিয়ে বার কোড বের করার চেষ্টা করি। কিছু প্রোডাক্টের বার কোড মিলে, কিছু প্রোডাক্টের বার কোড মিলে না। বুঝলাম, আসল-নকল মিলে প্রোডাক্ট দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাজগোজ অথরিটিকে এ বিষয়ে বললে ওরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে, যেন চোরের মায়ের বড় গলা। আমি চাই ওরা ভুল শুধরে আবার সততার সাথে ব্যবসায় ফিরুক। কিন্তু এই যে বিগত সময়ে নকল প্রোডাক্ট সাপ্লাই করেছে এর জন্যে কোনো দুঃখবোধ নাই। আরও বড়াই করে বাহাদুরি কথা বলছে। আমি ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই। কীভাবে কী করতে হবে পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

সোমবার (১ এপ্রিল) ঢাকার বেইলি রোডের শোরুমে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু পণ্যে বিএসটিআইর লোগো রয়েছে। তবে বেশিরভাগই বিএসটিআইর অনুমতি নেই। আবার আমদানিকৃত পণ্য দাবি করা হলেও সেই পণ্যে নেই আমদানিকারকের স্টিকার। আবার কিছু পণ্যে আমদানিকারকের স্টিকারের সাথে নেই ইম্পোর্টার প্রদত্ত এমআরপি। ফলে আসলেই সেগুলো আমদানিকৃত নাকি চকবাজার থেকে তৈরি নকল পণ্য তা শনাক্তের উপায় নেই।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে কোনো পণ্য সেবা বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন ধারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতি. সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ইসলাম বলেন, ‘প্যাকেটজাত পণ্য নিয়ে বিএসটিআইয়ের একটি আইন আছে। যেখানে বলা আছে পণ্যের প্যাকেট কীভাবে করতে হবে, কি কি তথ্য থাকা লাগবে। বিশেষ করে আমদানিকারকের স্টিকার, মূল্য, উৎপাদন এবং মেয়াদের তারিখ অবশ্যই থাকতে হবে। ইদানীং এসব বিষয়ে অনেক ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।’

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করলেও তা বাজারজাত করতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হবে।’

চর্ম, যৌন ও লেজার সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মীর এম সিদ্দিকি জানান, ‘ত্বক ফর্সা করার অনুমোদনহীন এসব প্রসাধনীতে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে।’

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তসনিম খান জামান জানান, ‘এসব প্রসাধনীর সাইড ইফেক্টের রোগী আমাদের কাছে প্রচুর আসছে। প্রতিদিনই ২-৩ জন রোগী আসেন যাদের ত্বক নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ক্রিমে অনেকের চামড়া পাতলা হয়ে যায়, মুখে ব্রণ হয়। অনেকের ক্ষেত্রে পুরুষের মতো নারীদের মুখেও অবাঞ্ছিত লোম হচ্ছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য না করে জনসংযোগ বিভাগে কথা বলতে বলেন।

জনসংযোগ বিভাগ থেকে আজমেরি নামে একজন বলেন, ‘সব প্রোডাক্টে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে না। আর আগে একবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান করে কিছু অসঙ্গতি পেয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা সেগুলো সমাধান করেছি। এখন আমাদের প্রোডাক্টে আর কোনো সমস্যা নেই।’

ট্যাগস :

বন্ধ হয়নি ‘সাজগোজের’ প্রতারণা

আপডেট সময় : ১১:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা : ঈদ উপলক্ষ্যে কসমেটিক্স বিক্রেতাদের বিক্রির ধুম পড়েছে। এই সুযোগে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানও আইন লঙ্ঘন করে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। ‘সাজগোজ’ এর মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করতে পিছপা হচ্ছে না। এমন ঘটনার জন্য ইতোপূর্বে তাদের জরিমানাও করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

তবে এই শাস্তির পরও থামেনি তাদের প্রতারণা। বিদেশ থেকে পণ্য আনা হলে সেই পণ্যে আমাদানিকারকের তথ্য থাকে। কিন্তু সাজগোজের শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বহু পণ্যে এমন কোনো তথ্য নেই।

ঈদের আগে চকবাজার থেকে নকল পণ্য এনে কোরিয়া-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নামে বিক্রি করছে কিনা তা নিয়ে ক্রেতারা বিভ্রান্তিতে পড়েছে। ফলে অনেকে সাজগোজের পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন।

আলিফা জাহান ইশা নামে একজন ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘অথচ সাজগোজরে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম।’ হালিমা নামে একজন লিখেছেন ‘হোয়াট দ্য, এই সাজগোজ থেকে প্রতিমাসেই আমি ২ বার বা ৩ বার অর্ডার করে থাকি। এত বড় পেইজে যদি এই অবস্থা হয় কই যাব তাহলে।’

এছাড়াও সাজগোজের পণ্যে যেসব বারকোড থাকে তা স্ক্যান করেও কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ফলে এসব পণ্য নকল বলেই সন্দেহ ক্রেতাদের।

হামিদা আক্তার সুমি নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ১ মাসেরও ওপর হয়ে যাচ্ছে সাজগোজ থেকে কিছু প্রোডাক্ট কিনেছিলাম। অন্ধ বিশ্বাস করে সেগুলো ব্যবহার করে আসছি। তাই ক্রয় রশিদও ফেলে দিয়েছি। সম্প্রতি সাজগোজে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান দেখে সন্দেহবশত প্রোডাক্টগুলো বের করে অ্যাপস দিয়ে বার কোড বের করার চেষ্টা করি। কিছু প্রোডাক্টের বার কোড মিলে, কিছু প্রোডাক্টের বার কোড মিলে না। বুঝলাম, আসল-নকল মিলে প্রোডাক্ট দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাজগোজ অথরিটিকে এ বিষয়ে বললে ওরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে, যেন চোরের মায়ের বড় গলা। আমি চাই ওরা ভুল শুধরে আবার সততার সাথে ব্যবসায় ফিরুক। কিন্তু এই যে বিগত সময়ে নকল প্রোডাক্ট সাপ্লাই করেছে এর জন্যে কোনো দুঃখবোধ নাই। আরও বড়াই করে বাহাদুরি কথা বলছে। আমি ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই। কীভাবে কী করতে হবে পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

সোমবার (১ এপ্রিল) ঢাকার বেইলি রোডের শোরুমে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু পণ্যে বিএসটিআইর লোগো রয়েছে। তবে বেশিরভাগই বিএসটিআইর অনুমতি নেই। আবার আমদানিকৃত পণ্য দাবি করা হলেও সেই পণ্যে নেই আমদানিকারকের স্টিকার। আবার কিছু পণ্যে আমদানিকারকের স্টিকারের সাথে নেই ইম্পোর্টার প্রদত্ত এমআরপি। ফলে আসলেই সেগুলো আমদানিকৃত নাকি চকবাজার থেকে তৈরি নকল পণ্য তা শনাক্তের উপায় নেই।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে কোনো পণ্য সেবা বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন ধারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতি. সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ইসলাম বলেন, ‘প্যাকেটজাত পণ্য নিয়ে বিএসটিআইয়ের একটি আইন আছে। যেখানে বলা আছে পণ্যের প্যাকেট কীভাবে করতে হবে, কি কি তথ্য থাকা লাগবে। বিশেষ করে আমদানিকারকের স্টিকার, মূল্য, উৎপাদন এবং মেয়াদের তারিখ অবশ্যই থাকতে হবে। ইদানীং এসব বিষয়ে অনেক ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।’

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করলেও তা বাজারজাত করতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হবে।’

চর্ম, যৌন ও লেজার সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মীর এম সিদ্দিকি জানান, ‘ত্বক ফর্সা করার অনুমোদনহীন এসব প্রসাধনীতে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে।’

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তসনিম খান জামান জানান, ‘এসব প্রসাধনীর সাইড ইফেক্টের রোগী আমাদের কাছে প্রচুর আসছে। প্রতিদিনই ২-৩ জন রোগী আসেন যাদের ত্বক নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ক্রিমে অনেকের চামড়া পাতলা হয়ে যায়, মুখে ব্রণ হয়। অনেকের ক্ষেত্রে পুরুষের মতো নারীদের মুখেও অবাঞ্ছিত লোম হচ্ছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য না করে জনসংযোগ বিভাগে কথা বলতে বলেন।

জনসংযোগ বিভাগ থেকে আজমেরি নামে একজন বলেন, ‘সব প্রোডাক্টে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে না। আর আগে একবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান করে কিছু অসঙ্গতি পেয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা সেগুলো সমাধান করেছি। এখন আমাদের প্রোডাক্টে আর কোনো সমস্যা নেই।’