ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিবেশ দূষণেই বছরে ৩ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু

ঢাকা : ২০১৯ সালে পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল বায়ুদূষণেই মারা গেছে ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝুঁকির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও নারীরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সেখানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল বায়ুদূষণেই মারা গেছে ৫৫ শতাংশ।

দূষণের কারণে ২০১৯ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের পয়োনিষ্কাশন, সিসা দূষণসহ বিভিন্ন কারণে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়। এর ফলে বছরে ৫২২ কোটি দিন অসুস্থতায় পার করে মানুষ।

ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।

পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ভীষণ ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট।

গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানেরও মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ প্রতিরোধ করা গেলে বছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে বলেও সেখানে উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি প্রতিবেদনের তথ্য ও উপাত্তগুলো পুরোপুরি গ্রহণ করেননি, আবার একেবারে সত্য নয়, সেটিও বলেননি।

মন্ত্রী বলেন, “সমস্যা যে নেই, তা আমরা কখনোই বলব না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না, তা আমাদের অবশ্যই নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।”

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, তাদের কোনও দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান দিতে হবে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।”

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে আন্তসীমান্ত দূষিত বায়ুপ্রবাহের উৎস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ভারতের পাঞ্জাবের দূষিত বায়ু পাকিস্তানের পাঞ্জাবে যায়। তেমনিভাবে এক দেশের দূষিত বায়ু অপর দেশে যায়। এতে কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই।”

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশবিশেষজ্ঞ এবং প্রকাশিত প্রতিবেদনের সহপ্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, “সময়োচিত এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশদূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি দূষণ কমাতে পারে।”

ট্যাগস :

পরিবেশ দূষণেই বছরে ৩ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু

আপডেট সময় : ০৩:২৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঢাকা : ২০১৯ সালে পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল বায়ুদূষণেই মারা গেছে ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝুঁকির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও নারীরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সেখানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল বায়ুদূষণেই মারা গেছে ৫৫ শতাংশ।

দূষণের কারণে ২০১৯ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের পয়োনিষ্কাশন, সিসা দূষণসহ বিভিন্ন কারণে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়। এর ফলে বছরে ৫২২ কোটি দিন অসুস্থতায় পার করে মানুষ।

ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।

পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ভীষণ ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট।

গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানেরও মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ প্রতিরোধ করা গেলে বছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে বলেও সেখানে উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি প্রতিবেদনের তথ্য ও উপাত্তগুলো পুরোপুরি গ্রহণ করেননি, আবার একেবারে সত্য নয়, সেটিও বলেননি।

মন্ত্রী বলেন, “সমস্যা যে নেই, তা আমরা কখনোই বলব না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না, তা আমাদের অবশ্যই নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।”

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, তাদের কোনও দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান দিতে হবে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।”

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে আন্তসীমান্ত দূষিত বায়ুপ্রবাহের উৎস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ভারতের পাঞ্জাবের দূষিত বায়ু পাকিস্তানের পাঞ্জাবে যায়। তেমনিভাবে এক দেশের দূষিত বায়ু অপর দেশে যায়। এতে কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই।”

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশবিশেষজ্ঞ এবং প্রকাশিত প্রতিবেদনের সহপ্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, “সময়োচিত এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশদূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি দূষণ কমাতে পারে।”