ঢাকা ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু

বান্দরবানে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। পাহাড়ে ‘সন্ত্রাসীদের’ অবস্থান শনাক্ত করতে উড়ানো হচ্ছে ড্রোন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছিল র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই যৌথ অভিযান চলবে। সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো করেই সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে।

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “মূলত টাকা লুট ও কেএনএফের সক্ষমতা জানান দিতেই এসব করা হয়েছে। বান্দরবান জেলায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, উত্তরসূরিদের অনুপ্রেরণা ও বহির্বিশ্বে তাদের সহযোগীদের কাছে সক্ষমতা জানান দিতেই এমন ঘটনা ঘটায় সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যরা।”

সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের বিষয়ে র‌্যাবের এই পরিচালক বলেন, “রুমা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলা উদ্ধার করা না গেলেও র‌্যাব, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সবার প্রচেষ্টায় কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে কৌশলে অপহরণের শিকার রুমা সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।”

তবে গোপনীয়তার কারণে কোন কৌশল অবলম্বন করে রুমার কোন স্থান থেকে ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়েছে তা জানাননি তিনি।

পুলিশ বলছে, যৌথ অভিযান শুরু হওয়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা গহীন পাহাড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন।

তিন দিন ধরে কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে থানচি বাজার ও থানার তিন দিক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে তারা থানা দখলের চেষ্টা করে। এ সময় আমরা পাল্টা গুলি চালালে তারা পালিয়ে যায়। কেএনএফ সদস্যরা এখন আত্মগোপনে রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক লুটের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। রুমায় সোনালী ব্যাংক লুটের ঘটনায় রুমা থানায় তিনটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর কৃষি ব্যাংকে লুটের ঘটনায় থানচি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০-৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ছয়টি নৃ-গোষ্ঠীর জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ। তাদের সামরিক শাখার নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি- কেএনএ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আগের সংগঠনগুলো সন্দেহের চোখে দেখে কেএনএফকে। এই সংগঠনটিও পাহাড়ে চাকমা আধিপত্যের বিরোধিতা করে।

কেএনএফের নেতা হিসাবে বম জনগোষ্ঠীর নাথান বমের নাম আসে, সেই কারণেই সংগঠনটি বম পার্টি নামে পরিচিত। কয়েক বছর আগে সংগঠনটি আলোচনায় উঠে আসে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের ‘যোগসাজশের’ কারণে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরছাড়া একদল তরুণের সন্ধানে নেমে র‌্যাব জানতে পারে, তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন একটি জঙ্গি দলে ভিড়েছে। আর পাহাড়ে তাদের আশ্রয় এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেএনএফ। ২০২২ সালে র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে এই খবর দিয়েছিল।

এরপর জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমায় অভিযান চালায় র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে সেনাসদস্যের প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে।

এই সংঘাতের মধ্যে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে এই বছরের শুরু অবধি রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদমে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকারি প্রশাসন। এজন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে গঠন করা হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সবশেষ মার্চেই কেএনএফের সঙ্গে শান্তি কমিটির দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়।

ট্যাগস :

কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু

আপডেট সময় : ০৩:২১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। পাহাড়ে ‘সন্ত্রাসীদের’ অবস্থান শনাক্ত করতে উড়ানো হচ্ছে ড্রোন।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছিল র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই যৌথ অভিযান চলবে। সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো করেই সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে।

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “মূলত টাকা লুট ও কেএনএফের সক্ষমতা জানান দিতেই এসব করা হয়েছে। বান্দরবান জেলায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, উত্তরসূরিদের অনুপ্রেরণা ও বহির্বিশ্বে তাদের সহযোগীদের কাছে সক্ষমতা জানান দিতেই এমন ঘটনা ঘটায় সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যরা।”

সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের বিষয়ে র‌্যাবের এই পরিচালক বলেন, “রুমা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলা উদ্ধার করা না গেলেও র‌্যাব, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সবার প্রচেষ্টায় কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে কৌশলে অপহরণের শিকার রুমা সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।”

তবে গোপনীয়তার কারণে কোন কৌশল অবলম্বন করে রুমার কোন স্থান থেকে ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়েছে তা জানাননি তিনি।

পুলিশ বলছে, যৌথ অভিযান শুরু হওয়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা গহীন পাহাড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন।

তিন দিন ধরে কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে থানচি বাজার ও থানার তিন দিক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে তারা থানা দখলের চেষ্টা করে। এ সময় আমরা পাল্টা গুলি চালালে তারা পালিয়ে যায়। কেএনএফ সদস্যরা এখন আত্মগোপনে রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক লুটের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। রুমায় সোনালী ব্যাংক লুটের ঘটনায় রুমা থানায় তিনটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর কৃষি ব্যাংকে লুটের ঘটনায় থানচি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০-৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ছয়টি নৃ-গোষ্ঠীর জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ। তাদের সামরিক শাখার নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি- কেএনএ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আগের সংগঠনগুলো সন্দেহের চোখে দেখে কেএনএফকে। এই সংগঠনটিও পাহাড়ে চাকমা আধিপত্যের বিরোধিতা করে।

কেএনএফের নেতা হিসাবে বম জনগোষ্ঠীর নাথান বমের নাম আসে, সেই কারণেই সংগঠনটি বম পার্টি নামে পরিচিত। কয়েক বছর আগে সংগঠনটি আলোচনায় উঠে আসে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের ‘যোগসাজশের’ কারণে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরছাড়া একদল তরুণের সন্ধানে নেমে র‌্যাব জানতে পারে, তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন একটি জঙ্গি দলে ভিড়েছে। আর পাহাড়ে তাদের আশ্রয় এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেএনএফ। ২০২২ সালে র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে এই খবর দিয়েছিল।

এরপর জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমায় অভিযান চালায় র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে সেনাসদস্যের প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে।

এই সংঘাতের মধ্যে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে এই বছরের শুরু অবধি রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদমে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকারি প্রশাসন। এজন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে গঠন করা হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সবশেষ মার্চেই কেএনএফের সঙ্গে শান্তি কমিটির দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়।