ঢাকা ০৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক বছরে সিজারিয়ান প্রসব বেড়েছে ৯ শতাংশ

ঢাকা : দেশে এক বছরে সিজার বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২৩’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ।

এসডিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিবিএসের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে প্রজনন হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ২ দশমিক ২০ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের হারও কমেছে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৫৮.৬ শতাংশ ও ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। সেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন। অর্থাৎ দেশে পুরুষের চেয়ে নারীরা সংখ্যায় বেশি।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বশেষ চূড়ান্ত জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। নতুন করে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দেশে গড় আয়ু সামান্য কমেছে। তবে জরিপের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৪। ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ।

প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এখন ১,১৭১ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩।

প্রতিবেদনে দেশে মানুষের মৃত্যুর ১০টি শীর্ষ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রথম কারণ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪ শতাংশ। তা ছাড়া পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ধরা হয়েছে ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২ শতাংশ) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন।

বিবিএস জানায়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০.৬৭%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫+ বয়সি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে ১৫+ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫+ বছর বয়সিদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১ শতাংশ।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, পূর্বের চেয়ে মাতৃমৃত্যু হার লক্ষণীয়ভাবে কমে আসা এবং দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়াÑ এ দুটি সূচক দেখে সরকার যে জনকল্যাণে কাজ করছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

শাহনাজ আরেফিন বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে যথাসময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত, প্রকাশ ও সংরক্ষণে বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থা বিবিএসের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন। আজকের প্রতিবেদন প্রকাশনা তারই প্রমাণ।

সাহান আরা বানু বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রতিফলন।

ট্যাগস :

এক বছরে সিজারিয়ান প্রসব বেড়েছে ৯ শতাংশ

আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

ঢাকা : দেশে এক বছরে সিজার বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২৩’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ।

এসডিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিবিএসের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে প্রজনন হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ২ দশমিক ২০ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের হারও কমেছে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৫৮.৬ শতাংশ ও ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। সেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন। অর্থাৎ দেশে পুরুষের চেয়ে নারীরা সংখ্যায় বেশি।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বশেষ চূড়ান্ত জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। নতুন করে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দেশে গড় আয়ু সামান্য কমেছে। তবে জরিপের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৪। ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ।

প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এখন ১,১৭১ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩।

প্রতিবেদনে দেশে মানুষের মৃত্যুর ১০টি শীর্ষ কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রথম কারণ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪ শতাংশ। তা ছাড়া পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ধরা হয়েছে ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২ শতাংশ) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন।

বিবিএস জানায়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০.৬৭%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫+ বয়সি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে ১৫+ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫+ বছর বয়সিদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১ শতাংশ।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, পূর্বের চেয়ে মাতৃমৃত্যু হার লক্ষণীয়ভাবে কমে আসা এবং দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়াÑ এ দুটি সূচক দেখে সরকার যে জনকল্যাণে কাজ করছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

শাহনাজ আরেফিন বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে যথাসময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত, প্রকাশ ও সংরক্ষণে বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থা বিবিএসের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন। আজকের প্রতিবেদন প্রকাশনা তারই প্রমাণ।

সাহান আরা বানু বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রতিফলন।